টিটি— টেটানাস ভ্যাকসিন।
টিডি— টেটানাস অ্যান্ড ডিফথেরিয়া ভ্যাকসিন।
এইচপিভি— হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ভ্যাকসিন।
তিনটি টিকাই মেয়েদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অল্প বয়সে দিতে হয়। তবে তিনটি টিকা নিয়ে অনেকেই কিছুটা বিভ্রান্তিতে থাকেন— কোন টিকা কেন দেওয়া হয়? কখন দেওয়া জরুরী?
টিটি টিকা মূলত টেটানাস বা ধনুষ্টঙ্কারের বিরুদ্ধে কাজ করে। আমাদের আশেপাশের প্রায় সবখানে টেটানাসের ব্যাকটেরিয়ার স্পোর চষে বেড়াচ্ছে। এই ব্যাকটেরিয়ার নাম ক্লসট্রিডিয়াম টেটানি। এদের স্পোরগুলো যে কোনো চরম পরিবেশে অক্ষত থাকে। প্রচণ্ড গরম বা ঠাণ্ডা, এমনকি পানিতে আধা ঘন্টা ফোটালেও এরা বেঁচে থাকে। ঘরে-বাইরের ধুলাবালি, মাটি, মরিচা ধরা লোহা, কুকুর-বিড়ালের মুখ, গরু ছাগলের নাড়িভুঁড়ি— প্রায় সবখানেই এদের রাজত্ব। শুধু মরিচা ধরা লোহায় ক্ষত হলেই টেটানাস ইনফেকশন হবে— ধারনাটি ভুল। কুকুর বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ে, ট্যাটু করালে, এমনকি রুট ক্যানেলসহ দাঁতের অন্যান্য চিকিৎসায় টেটানাস ইনফেকশন হতে পারে। যে কোনো ইনজুরি— যেখানে রক্ত বের হয়েছে, পুঁজ জমেছে, ধুলোবালি লেগেছে বা কোষ মারা গেছে— সেই জায়গাগুলো ভীষণ রিস্কি।
টেটানাসের কোনো ভালো চিকিৎসা নেই। একবার এই রোগে আক্রান্ত হলে সারা দেহের পেশি অচল বা প্যারালাইজড হতে থাকে। বিশেষ করে বুক ও গলার দিকের পেশি শক্ত হয়ে প্রচণ্ড টান লাগে। পিঠ ধনুকের মতো বেঁকে যায়। আটকে যায় শ্বাসপ্রশ্বাস। দম বন্ধ হয়ে বা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান আক্রান্ত ব্যক্তি। ভাবুন, এই ঘটনা একটি নবজাতকের সাথে ঘটলে কেমন হবে? বাংলাদেশে প্রতি বছর ৭৫,০০০ নবজাতক টেটানাসে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ৭০,০০০ শিশুকেই বাঁচানো যায় না।
টেটানাসে মর্টালিটি রেট অনেক হাই। তবে টিকা দিয়ে এই ইনফেকশন থেকে শতভাগ দূরে থাকা যায়। ছেলে হোক বা মেয়ে— সবার জন্য এই টিকা জরুরী। যারা মা হতে চান, এমন মেয়েদের জন্য আরও বেশি জরুরী। মেয়েদের ১৫ বছর বয়সেই টিটি টিকা দেওয়া শুরু করতে হবে। ১৮ বছর বয়সের মধ্যেই টিটি টিকার ৫টি ডোজ সম্পন্ন করতে হবে।
কিন্তু যদি ১৮ বছর বয়সের মধ্যে কোনো মেয়েকে টিটি না দেওয়া হয়, তবে প্রেগন্যান্সির আগে টিকা না নিলেও চলবে। প্রেগন্যান্সির ৫ মাসের মাথায়, যখন গর্ভের শিশু নড়াচড়া শুরু করে তখন টিটি টিকার প্রথম ডোজ এবং এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। অন্যথা গর্ভপাত বা শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে। তবে কৈশোরে ৫টি ডোজ দেওয়া হলে গর্ভাবস্থায় দেওয়ার দরকার নেই।
টিটি বুঝলাম, টিডির ব্যাপারটা কী?
বাংলাদেশে মা ও শিশুর টিকাদানের একটা বড়সড় প্রোগ্রাম আছে। নাম ‘সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি’ বা ইপিআই। এই প্রোগ্রামে শিশু-কিশোরদের একইসাথে টেটানাস ও ডিফথেরিয়ার টিকা দেওয়া হয়। তখন এই টিকাকে টিডি টিকা বলে।
তার মানে, জরায়ু ক্যানসারের টিকা আলাদা!
আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য জরায়ুমুখ ক্যানসার খুবই কমন। দেশের ১২ভাগ নারীই এই রোগে আক্রান্ত। বছরে ৮ হাজার নারী জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হলে, ৪ হাজারের বেশিই মারা যান। তবে এই রোগটিও টিকা প্রয়োগে ঠেকানো যায়। যাকে বলে এইচপিভি টিকা। ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই টিকা নেওয়া যায়। ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে এই টিকা বেশি কার্যকর। সেক্ষেত্রে ৯০% সুরক্ষা মেলে। ১৪-৪৫ বছরের মধ্যে সুরক্ষা ৬৯% এ নেমে আসতে পারে। টিটি বা টিডি টিকার সাথে এই টিকার কোনো সম্পর্ক নেই। এই টিকা দেওয়ার সুযোগ পেলেই দিয়ে ফেলা উচিত। কেননা, এই টিকা বাংলাদেশে সবসময় পাওয়া যায় না।