অতীত কিংবা ভবিষ্যতে যাওয়া নিয়ে মানুষের অনেক জল্পনা, কল্পনা ও কৌতুহল রয়েছে। অনেকের মনে আবার এরকমও প্রশ্ন জেগে থাকে যে আদৌ কি এই বর্তমান পৃথিবী ছেড়ে অতীত কিংবা ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব। তবে এই কঠিন প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ অথবা না কোন উত্তরই সঠিক ভাবে বলা যায় না। তবে আজকের এই সম্পূর্ণ লেখা জুড়ে থাকবে এই মজার এবং কৌতুহলী বিষয় নিয়ে আলোচনা অর্থাৎ আমরা কি কখনো অতীত কিংবা ভবিষ্যতে যেতে পারবো এবং যদি যেতেও পারি তাহলে কিভাবে যাবো।
সত্য বলতে আমরা মানুষ সব সময়ই অতীত দেখি। আমরা কখনোই কোন কিছুর বর্তমান দেখতে পাই না। আমাদের চোখের সামনে থাকা এখনকার সব জিনিস গুলোও আসলে অতীত, কেননা কোন কিছুর বর্তমান দেখবার সুযোগ আমাদের হয়ে ওঠে না। এবার আসল কথায় আসা যাক, মূলত আমরা একটি বস্তুকে তখন দেখতে পাই যখন আলোর উৎস থেকে আলো সেই বস্তুর উপর পড়ে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় আবার আমাদের চোখে ফিরে আসে।
কিন্তু বস্তু থেকে যখন আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পুনরায় ফিরে আসে তখন নিশ্চয়ই কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। তো আলো চোখে আসতে যেই সময় প্রয়োজন হয় আলোটা ঠিক সেই সময় অতীতের আলো। যেহেতু আলোটা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বের তাই আমরা সেই আলোর সাহায্যে যা দেখি তা সেই নির্দিষ্ট সময় পূর্বের দৃশ্য। আলোর গতিবেগ ঘন্টায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার এবং বস্তু থেকে আমাদের চোখের দূরত্ব খুব কম হওয়ায় খুব শীঘ্রই আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছায়। যেহেতু প্রতিফলিত বস্তুর অবস্থান থেকে আমাদের চোখের দূরত্ব খুবই কম থাকে তাই আমরা এই সূক্ষ অতীত দেখতে পাই না। তবে দূরত্বের উপর এই অতীত দেখার বিষয়টা অনেকটাই নির্ভর করে। মজার বিষয় হচ্ছে দুরত্বটা যত বেশি হবে আমরা আরো তত বেশি আগের অতীত দেখতে পারব। কারণ দূরত্ব বেশি হলে আমাদের চোখে আলো আসতে বেশি সময় লাগবে এবং বস্তুর অতীতটাও আমরা খুব সহজেই ধরতে পারবো। এখন দূরত্বটা যদি একটু বাড়িয়ে চিন্তা করি তাহলে ধরা যাক, একজন মানুষ সূর্যের কাছে খুব শক্তিশালী একটি টেলিস্কোপ নিয়ে বসে আছে এবং সে পৃথিবীর দিকে নজর রাখছে। তাহলে কি হবে?
আমরা জানি সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো যেতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় লাগে। যেহেতু সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় লাগে তাহলে পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত আলো যেতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় লাগবে। এখন যদি পৃথিবী থেকে সূর্যের কাছে আলো যেতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় লাগে তাহলে সূর্যের ওখানে বসে থাকা ব্যক্তির টেলিস্কোপে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগের আলো যাবে, এতে করে ঐ আলো ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগের পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া দৃশ্য বহন করবে। এতে করে সূর্যের ওখানে বসে থাকা ব্যক্তি তার টেলিস্কোপের মাধ্যমে পৃথিবীর ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগের দৃশ্য দেখতে পারবে। তাছাড়া সূর্যের কাছ থেকে সবসময়ই পৃথিবীতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগে যা ঘটছিল তা দেখা যায়। এখন দুরত্বটা যদি আমরা আরো বাড়িয়ে নিয়ে পৃথিবী থেকে এমন কোন গ্রহের কথা চিন্তা করি যা ৬৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ (আলোর গতিতে চলতে থাকলে সেখানে পৌঁছাতে ৬৫ মিলিয়ন বছর লাগবে) দূরে অবস্থিত, তাহলে কি হবে? সেখান থেকে যদি অনেক শক্তিশালী একটি টেলিস্কোপ দিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকানো হয় তাহলে পৃথিবীর বর্তমান অবস্থার পরিবর্তে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাবে কারণ সেখানে আলো পৌঁছাতে ৬৫ মিলিয়ন বছর লাগে এবং সে আলোগুলো বর্তমান সময় থেকে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের দৃশ্য ধারণ করে। এতে করে সেই জায়গা থেকে আমরা পৃথিবীতে টেলিস্কোপের মাধ্যমে তাকালে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তে ডাইনোসর যুগ দেখতে পারব, কেননা ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরের অস্তিত্ব ছিল। এভাবে দূরত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে আরো গভীর অতীতে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু কথা হচ্ছে মানুষের পক্ষে কি আদৌ এত দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব হবে? যদি এই দূরত্বকে জয় করা সম্ভব হয় তাহলেই একমাত্র এই অতীত দেখা সম্ভব হবে।
অতীত নিয়ে অনেকটাই আলোচনা হয়ে গেল এবার একটু ভবিষ্যতে কিভাবে যাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করা যাক। তবে শেষের দিকে অতীতে যাওয়া নিয়ে ও গ্ৰান্ডফাদার প্যারাডক্স নিয়ে আরো আলোচনা করা হবে।
টাইম মেশিনে ভ্রমনের বিষয়টি গতি ও সময়ের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত। আমরা সবাই আসলে ভবিষ্যতে যাই কিন্তু তা বুঝতে পারি না কেননা এটি মূলত খুবই সূক্ষ্ম ভবিষ্যত। ধরা যাক আমরা একটা ট্রেনে করে ঢাকা থেকে বান্দরবান যাচ্ছি এবং বান্দরবান আমাদের গন্তব্য তাছাড়া সেটা ভবিষ্যতে রয়েছে, এতে করে কি হয়? এতে করে যখন গাড়ির মাধ্যমে আমরা বান্দরবানের দিকে যাব তখন আমরা আমাদের গন্তব্য বা ভবিষ্যতের দিকে যাব। এভাবেই আমরা ধীরে ধীরে ভবিষ্যতের দিকে যেতে থাকি। তবে এটা তো ছিল খুবই সূক্ষ্ম আকারে ভবিষ্যতে যাওয়ার কথা যা আমরা বর্তমান হিসেবে চিনি। আমাদের পৃথিবীতে বর্তমান বলতে আসলে কিছু নেই। আমরা মূলত সব সময় দেখি অতীত কিন্তু তার সাথে ভবিষ্যতের দিকেও অগ্রসর হই। এবার একটু বৃহৎ আকারে ভবিষ্যতে যাওয়ার কথা বলা যাক। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মতে যে বস্তু যত বেশি গতিশীল সময় তার উপর সময় তত কম প্রভাব বিস্তার করে অর্থাৎ সময় তার উপর কম কাজ করে। এখন একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
মনে করি, প্রথম দিন একজন ব্যক্তি অফিস থেকে বাসায় ফিরবেন কিন্তু তিনি কোন গাড়ি খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় তিনি বাসায় ফিরলেন পায়ে হেঁটে এবং তার জন্য তার সময় প্রয়োজন হল এক ঘন্টা। পায়ে হাঁটার কারণে তার এক ঘন্টা প্রয়োজন হলো কারণ তার গতি ছিল খুবই কম এতে সময় তার উপর অধিক বিস্তার করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন তিনি অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় একটা গাড়ি পেয়ে গেলেন এবং এখন তার বাসায় ফিরতে সময় লাগলো আধঘন্টা। দ্বিতীয় দিন তার আধঘন্টা সময় লাগার কারণ হচ্ছে তিনি গাড়িতে করে এসেছেন এবং তার গতি ছিল তার পায়ে হাঁটার তুলনায় বেশি,তাই তার সময় কম লেগেছে। এ থেকে বোঝা যায় সময় তার উপর কম কার্যকর হয়েছে কেননা এবার তার গতি একটু বেশি ছিল তাই সে তাড়াতাড়ি বাসায় এসেছে। এবার তৃতীয় দিন মনে করি তিনি অফিস থেকে ফেরার সময় বুলেট ট্রেনে করে ফিরলেন এবং এখন তার সময় লাগলো মাত্র দশ মিনিট অর্থাৎ তার গতি এখন এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে সময় তার উপর মাত্র ১০ মিনিট কাজ করেছে।
এই থেকে বোঝা যায় বুলেট ট্রেনের গতি গাড়ি এবং পায়ে হাঁটার তুলনায় বেশি হওয়ায় সময় তার ওপর আরো কম প্রভাব ফেলেছে এবং সে পূর্বের তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে পেরেছে। অর্থাৎ যে বস্তু যত গতিশীল হবে তার উপর সময় তত কম কাজ করবে। এভাবেই গতি বাড়াতে বাড়াতে যখন কেউ আলোর গতিবেগে (সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার) ছুটতে থাকবে তখন সময় তার জন্য স্থির বা ধীর হতে থাকবে। অর্থাৎ সময় তার উপর কম কাজ করবে। কিন্তু পৃথিবী তার আগের গতি তেই ঘুরবে বলে পৃথিবীর সময় আগের মতই থাকবে। পৃথিবীর সকল কিছুরই পরিবর্তন হতে থাকবে কিন্তু আলোর গতিতে ছুটে যাওয়া মানুষের খুব অল্প পরিবর্তন হবে কেননা তার প্রচুর গতির জন্য সময় তার ওপর কম কাজ করছে। এমন অবস্থায় সে গতিশীল ব্যক্তিটি যদি থেমে যায় এবং চারপাশে দেখে তখন সে দেখতে পারবে যে তার পরিচিত সকল ব্যক্তির বয়স এবং শারীরিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে বৃদ্ধ হয়ে গেছে এবং চারপাশের পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে গেছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের থিওরি অফ স্পেশাল রিয়েলিটিভিটির মাধ্যমে এ ঘটনাটি আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
মনে করুন আপনারা দুইজন যমজ ভাই পৃথিবীতে অবস্থান করছেন এবং আপনাদের উভয়েরই বয়স ২০ বছর। এবার আপনি ভবিষ্যতে যাওয়ার জন্য এমন একটি রকেট তৈরি করলেন যা সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার যেতে সক্ষম অর্থাৎ যেই রকেটটা আলোর বেগে যেতে পারে। এবার আপনি আপনার ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেই রকেট এর মাধ্যমে সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার বেগে ২০১০ সালে স্পেসে কিংবা অন্য কোথাও যাত্রা শুরু করলেন এবং আপনি পাঁচ বছর সে আলোর বেগে ছুটতে থাকলেন। এমন অবস্থায় আপনার এত পরিমাণ গতির জন্য সময় আপনার উপর কম কাজ করবে অর্থাৎ আপনার কাছে সেই পাঁচ বছর পাঁচ বছরই থাকবে। কিন্তু এই পাঁচ বছরে তো পৃথিবী তার আগের গতিতেই চলবে। অর্থাৎ আপনার রকেটের তুলনায় পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কম হওয়ায় পৃথিবীতে সবার উপর সময়ের প্রভাব বেশি থাকবে। কিন্তু পাঁচ বছর পর আপনি যখন পৃথিবীতে আসবেন তখন দেখবেন পৃথিবীতে ২৯ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। কেননা পৃথিবীর গতি কম হয় সময় পৃথিবীর উপর তার প্রভাব ফেলেছে। আপনি আপনার স্পেস ভ্রমণ শেষে আপনার যমজ ভাইয়ের সাথে যখন সাক্ষাৎ করবেন তখন দেখবেন আপনার শারীরিক গঠনের চেয়ে তার শারীরিক গঠনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে অর্থাৎ তার বয়স অনেক বেড়ে যাবে কারণ তার ওপর সময় বেশি প্রভাব ফেলতে ফেলেছে। তখন আপনার সেই ২০ বছর বয়সের ভাইয়ের বয়স হবে ৩৯ বছর কিন্তু সময় আপনার উপর কম প্রভাব ফেলার ফলে আপনার বয়স ঠিকই পঁচিশ বছর হবে। কিন্তু আপনার ভাইয়ের বয়স পাঁচ বছর পর ২৫ না হয়ে ৩৯ হয়ে যাবে। এভাবেই আপনি আপনার বয়স ও শারীরিক গঠন ঠিক রেখে ভবিষ্যতে চলে যেতে পারবেন।
তবে টাইম মেশিনের ব্যাপারে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের পরিকল্পনাটা ছিল দারুন। তিনি চাইছিলেন পৃথিবীর উপর দিয়ে একটি বৃত্তাকার রেললাইন করবেন এবং সেই রেলের উপর থাকবে একটি বিশেষ ট্রেন এবং সেই ট্রেনটি তার গতি বাড়াতে বাড়াতে আলোর বেগের কাছাকাছি নিতে পারবে। সবাই যখন ওই ট্রেনে বসবে তখন ট্রেনটি চলতে শুরু করবে এবং ট্রেনটি এক সময় আলোর গতিতে ছুটতে শুরু করবে। যেহেতু ট্রেনটি আলোর গতিবেগে ছুটতে শুরু করবে তাই সময় ট্রেনের ভিতরে বসে থাকা সকলের উপর কম প্রভাব ফেলবে এবং সবার শারীরিক পরিবর্তন কম ঘটবে। কিন্তু তখন পৃথিবী তো তার আগের গতিতেই ঘুরবে তাই পৃথিবীর সকল কিছুর স্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটবে। এইটা যদি মানুষ পাঁচ বছর ভ্রমণ করে তাহলে পাঁচ বছর পর ট্রেন থেকে নেমে সবাই দেখতে পারবে পৃথিবীতে ২৯ বছরের পরিবর্তন ঘটে গেছে। এভাবে মূলত ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব, তবে আলোর গতিতে ছোটার জন্য মানুষের শারীরিক সক্ষমতা কতটুকু এটি একটি যুগান্তকারী প্রশ্ন। মানুষের শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী আলোর গতি কি মানুষের পক্ষে আদৌ সহ্য করা সম্ভব? তবে স্পেসে সময়ের তারতম্য রয়েছে। যে স্থানের গ্রাভিটি যত শক্তিশালী, সেখানকার সময় তত ধীর গতিতে কাজ করে অর্থাৎ সেখানে সময় বস্তুর উপর কম প্রভাব ফেলে। এরকম একটি ঘটনা আমরা ইন্টারস্টেলার মুভিতে দেখতে পাই। এই মুভির প্রধান চরিত্র কুপারকে কোন কারণে একটি গ্রহে যেতে হয় এবং সেই গ্রহের গ্রাভিটি ছিল অনেক বেশি। এর ফলে সেখানকার এক ঘন্টা ছিল পৃথিবীর সাত বছরের সমান। এতে যখন সে পৃথিবীতে ফিরে আসে তখন সে দেখতে পায় তার চেয়ে তার মেয়ের বয়স অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কি তার মেয়ে বৃদ্ধ হয়ে গেছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে মানুষ যদি একবার কোনো ভাবে ভবিষ্যতে যেতে পারে তাহলে সে আর কখনোই অতীতে ফিরতে পারবে না। কেননা অতীতে কখনোই ফেরা সম্ভব নয়। মানুষের পক্ষে শুধু অতীত দেখাই সম্ভব। তবে তাত্তিক ভাবে অতীতে যাওয়ার জন্য কিছু আলোচনা অবশ্য করা যায়। আগেই বলা হয়েছে কোন বস্তুর গতি যত বৃদ্ধি পাবে তার জন্য সময় তত ধীরগতিতে চলতে থাকবে। এখন এভাবে কোন বস্তু যদি আলোর গতি পেয়ে যায় তাহলে তার সময় আস্তে আস্তে ধীরগতির হয়ে যাবে। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে কেউ যদি আলোর গতির চেয়ে বেশি বিগ পেতে শুরু করে তাহলে কি হবে? এর উত্তর হচ্ছে মানুষ যখন আলো দিচ্ছে বেশি গতি পাবে তখন সময় তার জন্য পিছের দিকে এগোতে থাকবে এবং আস্তে আস্তে সে অতীতের দিকে যেতে থাকবে। সে যতক্ষণ এরকম গতিতে চলতে থাকবে সে ততক্ষণ অতীতের দিকে যেতে থাকবে। কিন্তু আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী তার কখনো সম্ভব না। কিন্তু মানুষের জন্য যখন সময় রিভার্স হতে থাকবে তখন একটি বড় ঝামেলা হয়ে যাবে। সময় রিভার্স হয়ে গেলে মানুষ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ এবং অক্সিজেন ত্যাগ করা শুরু করবে। এমন অবস্থায় মানুষের বেঁচে থাকা দুঃসাধ্য। যারা টেনেট মুভিটা দেখেছেন তারা অবশ্যই খেয়াল করবেন যারা অতীতে গিয়েছিল তারা অক্সিজেন সর্বরাহের জন্য আলাদা একটা একটা কালো মাস্ক পরেছিল।
এছাড়া বিজ্ঞানী কিপ ফর্ন মনে করেন ওয়ার্ম হোলের মাধ্যমে অতীতে যাওয়া সম্ভব। তবে আজকে আর ওয়ার্ম হোল নিয়ে আলোচনা করব না। এবার একটু গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সের দিকে চোখ রাখা যাক। গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সটা হচ্ছে এমন— মনে করুন আপনি অতীতে গিয়েছেন এবং আপনার দাদার সাথে আপনার দেখা হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় আপনার বাবার জন্মের পূর্বেই আপনি আপনার তাতে কি খুন করলেন। এর ফলে কী হবে? আপনার বাবার জন্ম হবে না। আপনার বাবার যদি জন্ম না হয় তাহলে আপনার জন্ম হবে না। আর আপনার যদি জন্ম না হয় তাহলে আপনি অতীতেও যেতে পারবেন না। এটাই হচ্ছে মূলত গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স। কিন্তু প্রকৃতি কোন প্যারাডক্স সমর্থন করে না। তাই আপনি অতীতে গিয়ে কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাই আপনি অতীতে গিয়ে আপনার দাদাকে শত বার মারার চেষ্টা করলেও আপনি শত বার ব্যর্থ হবেন কিন্তু আপনার দাদা কি আপনি মারতে পারবেন না। অর্থাৎ মানুষ অতীতের যেতেই পারবে কিন্তু কোন কিছু পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না।
তবে এতক্ষণ অতীতে ও ভবিষ্যতে যাওয়া নিয়ে যে আলোচনা হয়ে গেল তা মূলত তাত্ত্বিক বিষয়। এ তাত্ত্বিক বিষয়কে যদি বাস্তবে রূপ দিতে হয় তাহলে মানুষকে আগে জয় করতে হবে আলোর গতিবেগ। এছাড়া তাকে অর্জন করতে হবে নিজের দেহে আলোর গতিবেগ নেওয়ার সক্ষমতা। তবে যাই হোক সময় আমাদের জীবনে ফিরে না আসার সম্ভাবনাই বেশি। তাই আমরা আমাদের এই সময় গুলো রাঙিয়ে রাখার চেষ্টা করব এবং সময়কে ভালবাসবো।
সংগ্রহ: বিজ্ঞানপাইসি ইউটিউব চ্যানেল।



